২০শে মে, ২০২৫ ইং, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে জিলক্বদ, ১৪৪৬ হিজরী

দুই দশকে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট তামিম-মুশফিক-সাকিবদের সঙ্গে মাহমুদও

মাদারল্যান্ড নিউজ ডেস্ক: ১০ নভেম্বর দুই দশকে পা রেখেছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট। এ উপলক্ষেই পেছন ফিরে ইতিহাসের সেরা একাদশ বাছাই করার চেষ্টা। কালের কণ্ঠ’র অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১০ সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার নিজেদের সেরা একাদশ গড়েও দিয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে তা। মাসুদ পারভেজের করা ১১ পর্বের এই ধারাবাহিকের শেষ দিনে থাকছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার নিয়ে বিশেষ এক আয়োজনও। আজ থাকছে সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খানের সেরা একাদশ
নিজ দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলে ব্যতিক্রম একজন পাল্টা আক্রমণে উল্টো ভড়কে দিয়েছিলেন অনিল কুম্বলে-হরভজন সিংদের। ভারতের বিপক্ষে ২০০৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম টেস্টে মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৫৮ রানের মহাকাব্যিক সেই ইনিংসে বিমোহিত এক ধারাভাষ্যকার তাই কমেন্ট্রি বক্স থেকে তাঁর নাম দিয়েছিলেন, ‘লিটল ডায়নামো’। এর আট বছর দুই মাস পর শ্রীলঙ্কার গলে টেস্টে অভিষিক্ত ছোটখাটো আরেক তরুণও এমন রান করে যেতে থাকলেন যে একই ব্যক্তির দেওয়া নাম পেলেন মমিনুল হকও, ‘পকেট ডায়নামো’।
নামকরণ যিনি করেছিলেন, সেই ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খানের গড়া বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট একাদশে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বারবার ফিফটি করে আউট হওয়ার জন্য ‘মিস্টার ফিফটি’ নাম পেয়ে যাওয়া হাবিবুল বাশারও। তবে বাংলাদেশ দলের সাবেক ওপেনারের একাদশে তিনি কিংবা আশরাফুল কেউই নন, ব্যাটিংয়ের তিন নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন মমিনুলই।
তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে হাবিবুলকে দলে রাখতে না পারার দুঃখ তবু রয়েই গেছে আতহারের, ‘হাবিবুল আমার অন্যতম প্রিয় খেলোয়াড়। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ওকে দলে রাখতে পারছি না। তিন হাজারের ওপর রান করেছে। খারাপ লাগছে ওকে রাখতে না পেরে।’ রাখতে না পারার একমাত্র কারণ, ‘মমিনুল। এই ছেলেটি টেস্ট না খেললে অবশ্যই আমার প্রথম পছন্দ হতো হাবিবুল।’ মমিনুল এগিয়ে গেছেন এ জন্য, “বুঝতে হবে ওর টেস্ট ক্যারিয়ার কিভাবে শুরু হয়েছিল। অত্যন্ত সাবলীল ব্যাটিংয়ে এত রান করছিল যে এমনকি ওকে ‘এশিয়ার ব্র্যাডম্যান’ও বলতে শুরু করেছিল অনেকে।”
অনেকে বলতে পারেন একই ধরনের দুজন স্পিনার কেন নিয়েছি? আসলে ওরা একই রকম নয়। রফিক বাতাসে একটু দ্রুতগতির। একদিক থেকে সে রান আটকাবে, আরেক দিক থেকে সাকিব উইকেট নেওয়ার জন্য বল করবে। এতে প্রতিপক্ষ খেই হারাবে।
চার নম্বরে কাকে খেলাবেন, তা ভাবতে যাওয়া আতহারের মাথায় ভালোভাবেই এসেছিলেন বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিতে ইতিহাসে অমরত্ব পেয়ে যাওয়া আমিনুল ইসলামও। সেই ম্যাচ দিয়েই ধারাভাষ্যকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু আতহারেরও। সেই থেকে অল্প কিছু সিরিজ বাদ দিলে বাংলাদেশের প্রায় সব টেস্টই কমেন্ট্রি বক্সে বসে দেখেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ। অসংখ্য স্মরণীয় পারফরম্যান্সের মধ্যে আমিনুলের কীর্তি তাঁর হৃদয়ে আলাদা জায়গা নিয়েই আছে, ‘অভিষেক টেস্টে বুলবুলের সেঞ্চুরি সারা পৃথিবীকে অনেক বড় এক বার্তাই দিয়েছিল। ওকে আমি মিস করে গেলাম।’
গেলেন কারণ ব্যাটিংয়ের চার নম্বরে আতহার এমন একজনকে নিয়েছেন, আরো কয়েকজনের মতো দলে যাঁর জায়গা পাকা বলেই মনে করেন তিনি, ‘পারফরম্যান্স ও ধারাবাহিকতার কারণে দলে কয়েকজনের জায়গা কিন্তু পাকা। এই ধরুন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান।’ তাঁদের মধ্যে দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিককে চারেই ব্যাটিং করাতে চান বাংলাদেশ দলের সাবেক ওপেনার। একই সঙ্গে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’-এর পছন্দের উইকেটকিপিং থেকেও সরাতে চান না। যা দলে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রেও খুব কাজে দিয়েছে বলে মনে করেন আতহার।
তাঁর মতে, ‘মুশফিক-সাকিবদের যা খেলা দেখেছি, ওদের জায়গা নেওয়ার মতো আর কেউ আসতে পারে বলে মনে হয় না।’ ওপেনিংয়ে তামিমের জায়গাও তাই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। কিন্তু তাঁর সঙ্গী কে? ‘অনেকের কথাই ভেবেছি। কিন্তু ভালো শুরুকে একটি বড় ইনিংসে রূপ দেওয়ার ব্যাপারটিতেই ইমরুল কায়েস এগিয়ে গেছে।’ আতহার এখানে ফিরে দেখছেন একটি নির্দিষ্ট ইনিংসও, ‘খুলনায় (২০১৫-র এপ্রিলে) পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ফিরে যেতে হচ্ছে আমাকে। তামিমের সঙ্গে ৩০০ পার করা পার্টনারশিপ, নিজেও খেলেছিল দেড় শ ছাড়ানো ইনিংস।’
ব্যাটিংয়ের ছয় নম্বরে আতহার ভেবেছেন একজনকেই, ‘ছয় নম্বরে আর কেউ আসতে পারত কি না, তা আমি ভাবিইনি। এখানে মাহমুদ উল্লাহ আমার একমাত্র পছন্দ।’ কেন? দিয়েছেন সে ব্যাখ্যাও, ‘সব শেষ ১৩ টেস্ট ইনিংসে (চার টেস্ট সেঞ্চুরির তিনটিই এই সময়ে) বাংলাদেশের যে কারো চেয়ে বেশি রান ওর। টি-টোয়েন্টির প্রভাবে আগ্রাসী মনোভাব টেস্টেও চলে আসে কিছুটা। এটি কাটিয়ে উঠতে পারলে সে আদর্শ টেস্ট খেলোয়াড়। দেশ এবং দেশের বাইরে, টেস্ট সেঞ্চুরি আছে দুই জায়গাতেই। মাঝখানে ওকে বাদ দেওয়া হয় টেস্ট থেকে। তার পরও সে চেষ্টা ছাড়েনি। তা ছাড়া আমি যাদের দলে নিয়েছি, তাদের যার যার সেরা সময়টি ধরেই নিয়েছি।’
কাজেই ১০ বছর আগে নিজে শেষ টেস্ট খেলা মাশরাফি বিন মর্তুজা কেন আছেন, সেই ব্যাখ্যায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আতহার মনে করেন, মাশরাফিকে তাঁর দলের অধিনায়ক করাও কোনো ব্যাখ্যার দাবি রাখে না, ‘ওর মতো অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক আমি আর দেখিনি। ওকে নিয়ে নতুন করে তাই কিছু বলার নেই।’ বলার ছিল সাকিবের সঙ্গে দলের আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের থাকা নিয়ে, ‘অনেকে বলতে পারেন একই ধরনের দুজন স্পিনার কেন নিয়েছি? আসলে ওরা একই রকম নয়। রফিক বাতাসে একটু দ্রুতগতির। একদিক থেকে সে রান আটকাবে, আরেক দিক থেকে সাকিব উইকেট নেওয়ার জন্য বল করবে। এতে প্রতিপক্ষ খেই হারাবে।’
তবে রফিক শুধুই বোলার নন আতহারের দলে, ‘ওর টেস্ট সেঞ্চুরিও আছে। সাত নম্বরে লিটন দাসকে রেখে ব্যাটসম্যান একজন বাড়াব কিনা ভেবেছিলাম। তবে আমি বোলিং বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য ছয়জন ব্যাটসম্যান রেখে রফিককে সাতে খেলাব জেনুইন অলরাউন্ডার হিসেবে।’ বোলিং বৈচিত্র্য বাড়াতে রেখেছেন অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকেও, ‘ও কী করতে পারে, তা নিয়ে কিছু বলার নেই। কারণ ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সে কী করেছে, তা আমরা সবাই জানি।’ চাইলে কাজে লাগানো যাবে মাহমুদ উল্লাহর অফস্পিনও।
অবশ্য আতহারের এই দলে মাশরাফিসহ পেসারও তিনজন, কারণ, ‘দেশে ও বিদেশে, দুই জায়গাতেই খেলানোর মতো ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়েছি আমি।’ আছেন মুস্তাফিজুর রহমানও, ‘উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য আছে। ধীরগতির উইকেটে ওর কাটারও কাজে দেবে।’ আরো অনেকে বিবেচনায় এলেও সব শেষ পেসার হিসেবে নিজ যোগ্যতায়ই জায়গা করে নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন, ‘সেরা সময় বিবেচনায় নিয়েছি বলছিলাম। লর্ডসের অনার্স বোর্ডেও ওর নাম আছে। একটা সময় দুর্দান্ত বোলিং করেছে। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞতাও ছিল বিবেচ্য। টেস্টে ৭২ ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৫৮ উইকেট। সহজ কথা নয় রে ভাই!’

Share Button


     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ